ভুট্টায় উজ্জীবিত সীতাকুন্ডের কৃষক

ভুট্টায় উজ্জীবিত সীতাকুন্ডের কৃষক

ভুট্টা চাষের কথা কখনোই ভাবেননি কৃষক রফিকুল আলম। কারণ, ভুট্টা চাষের কোনো অভিজ্ঞতাই তার ছিল না। তাছাড়া তার এলাকায় আগে কেউই ভুট্টা চাষ করেননি। ফলে এ ফসল চাষ করে আদৌ সফল হওয়া যাবে কিনা তা নিয়ে মনে অনেক সংশয় ছিল। কিন্তু তার সব ভুল ভেঙে দেয় উপজেলা কৃষি অফিস,সীতাকুন্ড । উপজেলা কৃষি অফিসার সুশান্ত সাহা, কৃষি সম্প্রসারন কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ সালেহীন এবং উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মিত্রা বিশ্বাস তাকে ভুট্টা চাষ করতে শুধু উৎসাহিতই করেননি, কিভাবে ভুট্টা চাষ করতে হয় সে পরামর্শ দেয়া থেকে শুরু করে বীজ, সারসহ বিভিন্ন সহযোগিতা এনে দিয়ে উদ্ভুদ্ধ করেন। ফলে প্রথমবার পরীক্ষামূলক ভুট্টা চাষ করেই সফল হয়ে যান এ কৃষক। কৃষক রফিকুল আলমের বাড়ি সীতাকুন্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নের ঘোরামারা গ্রামে। বাড়ির পাশেই ভুট্টা চাষ করেছেন তিনি।সরেজমিনে রফিকুল আলমের ভুট্টা ক্ষেতে গিয়ে দেখা যায়, তার সুদীর্ঘ ক্ষেতে শুধু ভুট্টা আর ভুট্টা। প্রায় ৮ ফুট লম্বা প্রতিটি ভুট্টা গাছেই ফলন হয়েছে। একেকটি গাছে ২ থেকে ৪টি পর্যন্ত ভুট্টা দেখা গেছে। সবুজ গাছে হালকা হলদে ভুট্টাগুলো প্রকৃতিকে যেন এক অপরূপ সুন্দর রঙে সাজিয়ে দিয়েছেন। কৃষক রফিকুল আলম বলেন, চাষাবাদের সাথে দীর্ঘদিন ধরে জড়িত থাকলেও কখনো ভুট্টা চাষ করব এটা ভাবিনি। কারণ, ভুট্টা চাষের কোনো ধারণাই আমার ছিল না। কিন্তু গত বছরের ডিসেম্বর মাসে আমার জমিতে একটি ভুট্টার প্রদর্শনী কেন্দ্র করলে কৃষি অফিস সার্বিক সহযোগিতা করবে। কৃষি অফিস থেকে ৪ কেজি বীজ, ৬২ কেজি সার ও পরিচর্যার জন্য এক হাজার টাকা পাঠানো হয়। ২০ ডিসেম্বর আমার ৫০ শতক আয়তনের জমিতে প্রদর্শনীর জন্য সুপার সাইন ২৭৬০ প্রজাতির ভুট্টা বপন করেছি। তারপর কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের পরামর্শ মতো নিয়মিত পরিচর্যা করতে থাকি। মাঝে পোকার উপদ্রবও হয়েছিল। কিন্তু কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে ক্ষেত এখন পোকার উপদ্রবমুক্ত হয়েছে। তিনি বলেন, নিজে পরিচর্যা করার পাশাপাশি মাঝে মাঝে মুজুর দিয়েও কাজ করাই। নিবিড় পরিচর্যায় গাছগুলো বড় হতে থাকে। বর্তমানে প্রতিটি গাছেই ভুট্টার ফলন আছে। কৃষক রফিকুল আলম আরো বলেন, কৃষি বিভাগ থেকে বীজ, সার ও অন্যান্য সহযোগিতা দেয়ার পরও আমার নিজ থেকে আরো ২০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। তবে যা ফলন হয়েছে তাতে লাভের ব্যাপারে আমি আশাবাদী। তিনি বলেন, আগে এ এলাকায় রাঙামাটি, খাগড়াছড়িসহ বিভিন্ন জেলা থেকে ভুট্টা এনে বিক্রি করত ব্যবসায়ীরা। তাই আমাদের এ ভুট্টা প্রথমে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে চাহিদা পূরণ করা হবে। পরে অতিরিক্ত থাকলে অন্যত্র রফতানি করব। বাজারে প্রতিটি ভুট্টা খুচরা মূল্যে ১৫/১৬ টাকায় বিক্রি হয়। এ মূল্যে বিক্রি হলে কৃষকরা অবশ্যই লাভবান হবেন বলে তিনি মনে করেন। একই এলাকা অর্থাৎ ঘোড়ামারার অপর এক কৃষক নুরুল আবচারও এবার ভুট্টার চাষ করেছেন। বাম্পার ফলন হয়েছে তার জমিতেও। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কৃষক নুরুল আবচার বলেন, কৃষি বিভাগ ভুট্টা চাষে পরামর্শ ও সহযোগিতা দেবে জেনে আমিও ১৪ শতক জমিতে ভুট্টার চাষ করেছি। এ জমিতে দেড় কেজির মতো বীজ বপন করা হয়েছে। এছাড়া সার, কীটনাশক, শ্রমিক মুজুরিসহ অন্যান্য মিলিয়ে আমার ৭/৮ হাজার টাকার মত খরচ পড়েছে। তিনিও প্রথম দিকে ফলন কেমন হবে তা নিয়ে সংশয়ে থাকলেও পরে প্রতিটি গাছে ভুট্টা দেখে মুগ্ধ। এখন তার মনে হচ্ছে সব কষ্টই সার্থক হয়েছে। কৃষক রফিকুল আলম এবং নুরুল আবচার দু’জনের বাকি চাষীদের ভূট্টা চাষে অগ্রহী করছে।

                                                                                                       -খান মোহাম্মদ সালেহীন, কৃষি সম্প্রসারন কর্মকর্তা,সীতাকুন্ড, চট্টগ্রাম